এই শীতে ট্রেন্ড এখন ওয়েস্টার্ন আউটফিট!
বছরজুড়ে ট্রেন্ডি লুকে কমবেশি থাকছে ওয়েস্টার্ন লুক। তবে শীতে তার জবরদস্তি চলে পুরোদমে। কারও কাছে- ধুর; শীত মানেই তো ওয়েস্টার্ন। তাই এবারের শীতের শুরু থেকেই তরুণীরা উষ্ণতার পোশাক হিসেবে ওয়েস্টার্ন আউটফিটকেই বেছে নিচ্ছেন। কিশোর থেকে তরুণী এমনকি মধ্যবয়সী নারীও মেতে উঠতে চান ওয়েস্টার্ন আউটফিটে।
শীতের পোশাকের প্রধান ভিন্নতা ফেব্রিকে। মোটা, পাতলা, মাঝারি পুরুত্বের দেশি-বিদেশি সব কাপড়ের স্থান এখানে। তবে কি ওয়েস্টার্ন আউটফিট মানেই মোটা? অবশ্যই তা নয়। ওয়েস্টার্ন পোশাক যেমন স্টাইলিশ আর কাপড়ে থাকবে বৈচিত্র্য। ওয়েস্টার্ন আউটফিটের কাটছাঁটের অভাব নেই। নিট, ফিস এসব কাপড়ের ডিজাইন পোশাকের চাহিদা থাকে বাড়তি।
পোশাকের কালেকশনের সমাহারে শীত শুধু ছেলে মেয়েদের উষ্ণতার অনুষঙ্গই নয়, নিজেকে ফ্যাশনেবল করে তোলার উপলক্ষও বটে। এখানেই ফুটে ওঠে মুনশিয়ানা। কলেজ, ভার্সিটি পড়ুয়া তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে এক্সিকিউটিভ লেভেলের নারী-পুরুষরাও আজকাল ওয়েস্টার্ন পোশাক পরছেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না, ওয়েস্টার্ন পোশাক পরলেই কেবল ফ্যাশনেবল হয়ে ওঠা যায় না। কেননা ওয়েস্টার্ন আউটফিটে বাইরের লুকটাও জরুরি।
ডিমান্ড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল মাহমুদ জানান, ‘ওয়েস্টার্ন পোশাকের সঙ্গে ওয়েস্টার্ন লুক থাকা জরুরি। তাই ওয়েস্টার্ন আউটফিট পরতে একটু সচেতন না থাকলেই নয়। বর্তমানে মেয়েদের রাউন্ডনেক, টার্টলনেক থাকে বেশ ফোকাস ইন। ডিজাইনাররা এ মুহূর্তে পোশাকে অ্যাম্বেলিশমেন্টের থেকেও কাট ও শিলুটের ওপরে জোর দিচ্ছেন বেশি। পাশাপাশি স্যুটের ক্ষেত্রে বর্তমানে সাইড কার্ভের কাটিং থেকে শুরু করে ম্যাটেরিয়ালের অনেক পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায়। শুধু স্যুটের মোটা কাপড় নয়, মেয়েদের স্যুটের কাপড়ে শার্টিন, ভেলভেট, অ্যান্ডি এমনকি খাদিও ব্যবহার করা হচ্ছে। ফানেলের কাপড়ের সাশ্রয়ী স্যুটও বাজারে আছে।’
আমাদের দেশে বর্তমানে হাই স্ট্রিট বা হাই ফ্যাশনে আগ্রহীর সংখ্যা নেহাতই কম নয়। ওয়েস্টার্ন ট্রেন্ডে লং শার্ট, পাতলা সোয়েটার, বেশ কিছু স্কার্ফ, টাইটস, প্যান্টস, বেসিক টি-শার্ট, কার্ডিগান, ফুল লেন্থ সোয়েটার, ক্যাজুয়াল ব্লেজার, জ্যাকেট-হুডি যে কোনো কো-সেটের খুব সাধারণ পোশাকগুলোই এখন ব্যাপক জনপ্রিয়।
নানা নকশার ‘আউটার উইন্টার’ অর্থাৎ অন্য পোশাকের ওপর পরার মতো আরেকটি পোশাক, যেমন- কোট, জ্যাকেট ব্লেজার, সোয়েটার ইত্যাদি বাজারে আসা শুরু হয়েছে এর মধ্যে। পশ্চিমা ট্রেন্ড মেনেই নকশা করা হচ্ছে এসবের। কাপড়টা বেছে নেওয়া হচ্ছে এ দেশের আবহাওয়া উপযোগী। যেমন উল বা ফিস নয়, বরং সুতি ও অ্যাক্রিলিক মিশ্রণে সোয়েটার বানানো হয়েছে। এ ছাড়া মেয়েদের জন্য রাউন্ডনেক, টার্টলনেক সোয়েটার থাকছে। আছে নানা রকম পঞ্চো আর শ্রাগ।
পাশ্চাত্য ধারা অনুসরণ করে তৈরি করা হচ্ছে এখনকার শীতপোশাকে। বিশেষ করে মেয়েদের সোয়েটার। দৈর্ঘ্য একটু বেশি ও স্ট্রাইপ সোয়েটার এবার বেশি চলছে। সোয়েটারের গলায় ওভার ফিপ ডিজাইন ব্যবহার করা হয়েছে। এটি স্কার্ফের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। ভালো সোয়েটার চেনার উপায় এর বুনন, রঙের গভীরতা ও উলের ক্লাসিফিকেশন নির্ণয় করতে পারা। বহুরৈখিক আয়োজনে রয়েছে ভি-নেক, টারটেল নেক, ক্রু নেক, বোট নেকসহ নানা ধরনের সোয়েটার। তবে সময়ের চাহিদার সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে এখন ম্যাটেরিয়ালের নতুন প্রয়োগে নতুন ধারার কিছু সোয়েটারও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। হাতায়-গলায় কুঁচি দেওয়া, ভাঁজ করা সোয়েটার চলছে বেশি। কোমরে বেল্ট রয়েছে এমন শীতের পোশাক কিনছেন টিনএজার মেয়েরা। টি-শার্টের মতো সোয়েটারের চাহিদাও রয়েছে। শীত নিবারণের এ অনুষঙ্গটি মসৃণ-অমসৃণও হতে পারে। তারা হাইনেক, ফোল্ডিং ধরনের সোয়েটারও ব্যবহার করছেন অনেকে। এতে মাফলারের কাজ হয়। কোন কোন সোয়েটার আবার বড় গলার কালো, সাদা, চাপা সাদা ছাই, ধূসর ছাড়াও হলদে সবুজ, লাল, গোলাপি, নীল ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের স্ট্রাইপ দেওয়া সোয়েটার প্রাধান্য পেয়েছে। প্যান্ট বা টি-শার্টের সঙ্গে মিলিয়ে বা বিপরীত রঙের সোয়েটার অনেকে পরছেন। পাশাপাশি লম্বা কোটের ব্যবহারও বেড়েছে।
ছাই, ধূসর ছাড়াও হলদে সবুজ, লাল, গোলাপি, নীল ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের স্ট্রাইপ দেওয়া সোয়েটার প্রাধান্য পেয়েছে। প্যান্ট বা টি-শার্টের সঙ্গে মিলিয়ে বা বিপরীত রঙের সোয়েটার অনেকে পরছেন। পাশাপাশি লম্বা কোটের ব্যবহারও বেড়েছে।
মূলত ওয়েস্টার্ন লুক নির্ভর করে ড্রেস কোডের ওপর। যেমন- মেয়েদের অফিশিয়াল লুকে কোট-প্যান্ট থাকলে তার সঙ্গে মানিয়ে একই কালারের ছোট্ট একটা মাফলার ঝুলিয়ে দিতে পারেন। প্যান্টের সঙ্গে পঞ্চ পরতে পারেন, যাতে আরও স্মার্ট লাগবে। এ ছাড়া বাজারে খাদি কাপড়ের কুর্তিও পাওয়া যায়, যা একটু মোটা কাপড়ের তৈরি। এ ছাড়া খাদি কাপড়ের পাঞ্জাবি ও শাল রয়েছে ছেলেদের জন্য, যা এখন অনেক ট্রেন্ডি ফ্যাশন। শুধু পোশাক নয়, সাজসজ্জা হতে হবে একদমই বুঝেশুনে। ফর্মাল প্যান্ট-শার্ট পরলে সাজগোজ হবে একদমই সীমিত। হালকা মেকআপের সঙ্গে হালকা অর্নামেন্টস। ক্যাজুয়াল পোশাকের সঙ্গে জুড়ে নিতে পারেন মানানসই অর্নামেন্টস। নয়তো পুরো আয়োজনটাই মাটি হয়ে যাবে। ফর্মাল বা ক্যাজুয়াল ড্রেস যাই হোক না কেন, পোশাকের পাশাপাশি মেকআপ হতে হবে দিনরাতের ওপর নির্ভর করে। ঠোঁটে হালকা গোলাপি বা বাদামি গ্লাস লাগাতে পারেন। ম্যাট লিপস্টিকও লাগাতে পারেন। ফর্মাল পোশাক পরলে মেকআপে একটা মিশ্রভাব থাকতে হবে।