গরমের সাজ সজ্জা

বছর ঘুরে আসে গ্রীষ্মকাল। শীতকালের ভারি কাপড় তো অনেক আগেই তুলে ফেলেছেন আলমারিতে। বসন্তের উষ্ণ হিম আবহাওয়াও এখন অতীত। তীব্র রোদের ঝলকানি উঁকি দেয় রাজপথে। গরম এসেছে, তাই বলে ঘরে বসে নেই জীবনযাত্রায় তাল মিলিয়ে চলা আধুনিক মানুষ। আবহাওয়ার সঙ্গে পাল্টেছে পোশাকের ধরনও। কিন্তু তারপরেও একটু কথা যেন থেকেই যায়! চিরাচরিত গরমের পাতলা পোশাকে নিজেকে বাঁধতে মন চায় না আধুনিকাদের। আর তাই তো খোঁজ পড়ে ভিন্ন কিছুর। সেটি হোক পোশাকে কিংবা অনুসঙ্গে। প্রতিবারের মতো এই গরমেও থাকছে নতুন কিছু পোশাক আর ভিন্ন কিছু ফ্যাশন।

প্রখর রোদ জানান দিচ্ছে গ্রীষ্ম চলে এসেছে। প্রকৃতি যখন সেজেছে এই রুদ্রসাজে, তখন আর কী করা। সূর্যের তাপ আর গরমকে ফাঁকি দিতে চাইলে এখনই বেছে নিন স্বস্তির পোশাক, সঙ্গে আপনার সাজেও যোগ করুন স্নিগ্ধতার ছোঁয়া। তবে যতই আপনি সাজতে ভালবাসেন, তবু গরমকালে তো গরমের কথাটা মাথায় রাখতেই হবে। তপ্ত গরমে ফুটছে রাজপথ থেকে গলি। এই গরমের সময় থেকে বাঁচতে চাই সঠিক পোশাক- যা হবে ট্রেন্ডি, ফ্যাশনেবল এবং আরামদায়ক। কী পরবেন এই গরমে, কেমন এবারের গরমের পোশাক–
গরমের জামাকাপড় বাছার আগে সবার আগে নজর রাখুন ফেব্রিকের উপর। রেশম, জিন্সের পরিবর্তে পরুন সুতির কাপড়। সুতির পোশাকই হোক গরমের পোশাকের প্রথম পছন্দ। দিন হোক বা রাত, গরম থেকে বাঁচতে সুতি কাপড়ের তৈরি পোশাক কিন্তু একদিকে যেমন ফ্যাশনেবল, তেমনই আরামদায়কও। টাইট পোশাকের পরিবর্তে পরুন ঢিলেঢালা পোশাক। রোদে বেরুনোর সময় ফুলহাতা বা থ্রি কোয়ার্টার হাতার পোশাক পরুন। পোশাকের রং হিসেবে গরমে বাছুন হালকা রং। সাদা এ ব্যাপারে একদম পারফেক্ট। দিনের বেলা উজ্জ্বল রং না বাছাই ভাল। গরমকালে জমকালো রং একটু এড়িয়ে চলাই উচিত।

পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে মেয়েরা গরমের সময় ক্ষেত্রে সাদা, হালকা গোলাপি, হালকা বেগুনি, হালকা নীল, বাদামি, আকাশি, হালকা হলুদ, ধূসরসহ হালকা রঙের পোশাকগুলো প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
গরমে সাদা ও অন্যান্য হালকা রঙের পোশাক শুধু তাপ শোষণই করে না, সেই সঙ্গে চোখকে দেয় প্রশান্তি। দিনের বেলা উজ্জ্বল রং না বাছাই ভাল। গরমে গাঢ় রং এড়িয়ে চলাই বাঞ্ছনীয়। প্লাজো, লং কুর্তি, কিংবা ঢিলেঢালা কাটের পোশাক পরুন। যারা অতিরিক্ত মোটা অথবা অত্যাধিক গরমে কাজ করেন, তারা সুতি কাপড়ের তৈরি স্লিভলেস কামিজ ব্যবহার করতে পারেন।

স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির মেয়েরা; যাদের প্রতিনিয়ত বাইরে যাওয়া-আসা করতে হয়, ক্লাস করতে হয়, তারা এই গরমে সুতির সালোয়ার-কামিজ এবং ফতুয়া ও জিন্স পরতে পারেন। গরমে মেয়েদের পোশাক হওয়া উচিত আরামদায়ক। খুব মোটা কাপড়ের না হয়ে পাতলা কাপড়ের হলে সব থেকে ভাল হয়। বিশেষ করে শর্ট ফতুয়া, শর্ট কামিজ, টিশার্ট ইত্যাদি পোশাক মেয়েরা গরমের উপযোগী পোশাক হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।
পোশাকের রং যেন এমন হয় যা থেকে ত্বকের কোনও সমস্যা না হয়। আমরা বেশিরভাগ সময় পোশাকের বাইরের দিকটা দেখেই মোহে পড়ে যাই। কিন্তু পোশাকটি কী রং দিয়ে ডাই করা হয়েছে তা খেয়াল করি না। কোনও রাসায়নিক রং ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, এই বিষয়গুলো নিয়ে এক্কেবারে মাথা ঘামাই না। তাই পোশাকের কোয়ালিটি, রং এ সব নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করাটা ভীষণভাবে জরুরি। খাদি কিংবা হ্যান্ডলুমের পোশাক এখন ফ্যাশন ইন। কিন্তু বাজার ছেয়ে গিয়েছে নকল রং আর নকল সুতোর পোশাকে। তাই বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় পোশাকটি দু-তিনবার ধুলেই রং উঠে যায়। আবার গরমের সময় দেখা যায় ঘামে শরীরে পোশাক আটকে যায়। পোশাক খোলার পর দেখা যায় শরীরেও পোশাকের রং লেগে রয়েছে। এই রং রোমকূপ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে হতে পারে মারাত্মক চর্মরোগ। তাই গরমের সময় এমন পোশাক বাছতে হবে যেন তা ন্যাচরাল কালারে ডাই করা থাকে। যেসব পোশাক বেশি উজ্জ্বল সেগুলোতে কিছুটা হলেও রাসায়নিক রং মেশানো থাকে। তাই সুতির পোশাক কেনার সময় একটু বুঝেশুনেই কিনুন।ন্যাচারাল কালারের পোশাক, যেগুলো রঞ্জক, রিঠার মতো ভেষজ উপাদানে রং করা হয়, তেমন পোশাকেই গরমের সময় ঝলমলে হয়ে উঠুন।মেয়েরা সুতি কিংবা মসলিনে বানানো স্কার্প অ্যারাউন্ড, শর্ট কুর্তি, লিলেন ড্রেস, প্লাজো পরতে পারেন।
পোশাকের সঙ্গে অনুষঙ্গ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গরমে পোশাকের সঙ্গে মানানসই হালকা চটি বেশ আরামদায়ক। হাতে কাঠের বালা বা সুতোর চুড়ি পরতে পারেন। কানে পরতে পারেন পোশাকের সঙ্গে রং মিলিয়ে ছোট দুল। গরমে ধাতুর তৈরি গয়না না পরাই ভালো। এর বিকল্প হিসেবে পরতে পারেন প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি দুল, চুড়ি বা বড় মালা। রাখতে পারেন একটি রোদ-চশমাও।


গরমে নিচে একটি হালকা যেকোন জামা বা টি-শার্ট পরে তার উপর একটি কোটি পরে নিলেই হলো। একাধারে গরমে আরাম ও স্টাইলিস্টও বটে। একসময় ফ্যাশনের বেশ গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার হতো সুন্দর কোটি। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। এখন আর শীতে কোটি তেমন পরা হয় না। গরমেই পরা হয়। তবে সেই কোটি কিন্তু পরিবর্তন হয়ে গেছে অনেক। হালকা ও আরামদায়ক ফেব্রিক্সের এই কোটি তাই গরমেও জনপ্রিয়। এই সময়ে কোটি প্রায় সব ওয়েস্টার্ন পোশাক প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউজগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে। ফ্যাশনে কোটি বেশ জনপ্রিয়ও। বিশেষ করে বিভিন্ন শর্ট ড্রেসের সাথে কোটি খুবই ফ্যাশনেবল মনে হয়। টি-শার্ট বা ম্যাগী হাতার টি-শার্টের সঙ্গে কোটি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে মানিয়ে যায়। বিভিন্ন আরামদায়ক ফ্রেব্রিক্সে তৈরি এসব কোটি পরলে মনেই হবে না যে গরম পরেছে। আর গরমকে ভয় নয় উপভোগ করুন।