শীতকালে হাতের জন্য চাই বিশেষ যত্ন
শীতে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ত্বকের কোষগুলো ঠিকমতো পানি পায় না, তাই রুক্ষহয়ে ওঠে হাত-পা। এ সময় হাত ও পায়ের আর্দ্রতা বজায় রাখা জরুরি। প্রতিদিন হাত পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। যারা প্রতিদিন অতিরিক্ত পানির সংস্পর্শে আসেন তাদের অবশ্যই একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
বিশেষ করে রান্নাঘরে কাজ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, পাশেই যেন একটা তোয়ালে থাকে। কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাতটা আলতো করে মুছে ফেলুন। হাত কখনোই ভেজা রাখা যাবে না। মুছে সাথে সাথেই ময়েশ্চারাইজার লাগান। পরিষ্কার, সুন্দর, কোমল দুটি পা অন্যের সামনে সৌন্দর্যের সাথে রুচিরও পরিচয় বহন করে। হাত ও পায়ের যত্ন নিয়ে এগুলোর সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনুন। শীতে হাতের যত্নের প্রথম ধাপ হচ্ছে সঠিকভাবে তা পরিষ্কার করা।
শীতে হাতের কনুইয়ের ত্বক একটু বেশি রুক্ষ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে গ্লিসারিন খুব কাজ করে। রাতে ঘুমানোর আগে গ্লিসারিন অথবা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিন। সপ্তাহে একবার লেবু ও মধু মিশিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। শীতে বাইরে যাওয়ার সময় দু’হাতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার মেখে বেরুবেন।
হাত আমাদের সৌন্দর্যেরও বড় অংশ। একে মোলায়েম ও মসৃণ রাখতে নিয়মিত স্ক্র্যাব ও মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। ঘরেতৈরি স্ক্র্যাব ব্যবহার করতে পারেন। ১টি পাতিলেবুর রস ও ২ চা চামচ চিনিমিশিয়ে এই মিশ্রণটি হাতে দিয়ে ঘষে ঘষে মেলাতে পারেন, মরা কোষ উঠে মসৃণ হবে। এছাড়া আরেকটি মাস্ক হাতের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ব্যবহার করতে পারেন। ১ টেবিল চামচ ময়দা ও চালের গুঁড়া দুধে গুলে হাতে মেখে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন।
হাতের কনুই এর খসখসে ভাব দূর করতে ডাল বাটা দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে উষ্ণপানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর গ্লিসারিন বা লোশন লাগান। ২ টেবিল চামচ গুঁড়ো দুধ/দুধ, ২ টেবিল চামচ মধু ও ২ টেবিল চামচ লেবুররস একসাথে মিশিয়ে হাত ও পায়ে লাগান ভালো করে। ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়েফেলুন ভালো করে। এটি কালচে ছোপ দূর করে হাতে পায়ের উজ্জলতা বৃদ্ধিতেসাহায্য করবে।
ময়েশ্চারাইজার, লোশন, ক্রিম কেনার সময় অবশ্যই ভালো কোম্পানি এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেখে কেনা জরুরী।
• প্রতিদিন গোসলের আগে হাতে তেল মেখে নিন। অলিভ অয়েল খুব কার্যকরী এই শীতে। তারপর সাবান দিয়ে পায়ের চামড়া, গোড়ালি, আঙ্গুলের কোণ ও ধারগুলো পরিষ্কার করুন। হালকা গরম পানি দিয়ে হাত ধোবেন। এতে কোমল ভাব বজায় থাকবে। নখ পরিষ্কার করুন নেল ব্রাশ দিয়ে নখের চারপাশ, মাঝখানের অংশও।
• প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে কোনো ভালো ক্রিম দিয়ে হাত মাসাজ করবেন। এতে হাতের সৌন্দর্য বাড়বে এবং পা ফাটবে না।
• সপ্তাহে অন্তত দু’দিন উষ্ণ পানিতে হাত ভেজাবেন। এতে শরীরের রক্ত প্রবাহ ভালো হয়। এছাড়া নখও খুব ভালো থাকবে।
ঘরেই তৈরি করুন ময়েশ্চারাইজার:
হাতে পায়ের যত্ন নেয়ার সব শেষে ভালো কোনো ময়েসচারাইজার লাগাতে একেবারেইভুলবেন না। যদি প্রাকৃতিক ময়েসচারাইজার খোঁজেন তবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতেপারেন। ময়েসচারাইজার ভালো করে লাগিয়ে রাতে ঘুমুতে যাবেন।
বাজারে পাওয়া ময়েশ্চারাইজারের পাশাপাশি আপনি ঘরে বসেও বানিয়ে নিতে পারেন আপনার হ্যান্ড ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার। হাতের জন্য তিলের তেল, গ্লিসারিন ও গোলাপজল সমপরিমাণে মিশিয়ে ব্যবহারকরতে পারেন। তিলের তেলের পরিবর্তে জলপাইয়ের তেলও ব্যবহার করতে পারেন।
সপ্তাহে একদিন মাস্ক লাগান। মুলতানি মাটি, সয়াবিন গুঁড়া, কাঁচা হলুদ ও জলপাইয়ের তেল একসঙ্গে মিশিয়ে হাত ও পায়ে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
হাত ও পায়ের বিভিন্ন সমস্যা
. শীত মানেই হাতের চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া, কিন্তু চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এর সহজ সমাধান আপনি ঘরে বসেই করতে পারেন।
. যাদের হাতের চামড়া অত্যধিক রুক্ষ, তারা ক্ষারযুক্ত সাবান এড়িয়ে চলুন এবং ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন। অথবা বেসন দিয়ে ধুয়ে নিন।
. যাদের হাত ও পায়ের হাড়ের সন্ধিস্থানে কালো দাগ পড়ে, তারা সাবান বর্জন করুন। কাল দাগযুক্ত স্থানে লেবুর রস ও মধু লাগান। এতে খুব ভালো কাজ হয়।
. অনেকের চামড়া ফাটে তারা তিলের তেল ব্যবহার করুন। এটি ওষুধের মতো কাজ করবে।
শীতে অনেকের নখ ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সে ক্ষেত্রে লেবুর খোসা খুব কার্যকর। মুড়ি বা চানাচুরের সঙ্গে লেবুর খোসা মিশিয়ে ১৫ দিন নিয়মিত খেলে নখ ভাঙা বন্ধ হয়ে যায়।
অতিরিক্ত শুষ্ক হাত-পায়ে কাঠবাদামের মাস্ক লাগালে উপকার পাওয়া যায়।