কিডনি কে সুস্থ রাখতে কিছু সুপারফুড !!

সুস্থ হৃদপিণ্ডের মত সুস্থ কিডনিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের অতিরিক্ত পানি ও বর্জ্য ছেঁকে শরীর থেকে বাহির করে দেয় কিডনি এবং ক্ষতিকর টক্সিন মুত্রের মাধ্যমে বাহির করে দেয়। এছাড়াও শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ও বিভিন্ন তরলের ভারসাম্য রক্ষা করে কিডনি। কিডনির রোগের কারণে প্রস্রাবের সমস্যা, চোখের চারপাশে ফুলে যাওয়া এবং হাত ও পা ফুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। কিডনির সমস্যাযুক্ত ব্যক্তির হার্ট ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

সঠিক প্রকারের খাদ্য গ্রহণ শরীরের অঙ্গগুলোকে ঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। নির্দিষ্ট কিছু সুপারফুড আছে যারা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যেমন ফ্লাভনয়েড। তাছাড়াও এগুলোতে লাইকোপেন, বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি থাকে যা কিডনির স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। কিডনি সমস্যার প্রধান কারণ হচ্ছে ফ্রি র‍্যাডিকেলের উপস্থিতি।অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র‍্যাডিকেলের কারণে সৃষ্ট জারন প্রক্রিয়াকে ধীর করে বা বন্ধ করে। চলুন তাহলে সেই ৬ টি সুপারফুড সম্পর্কে জেনে নেই যা কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

১. বাঁধাকপি

কিডনির মেরামত ও পুষ্টির জন্য প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় বাঁধাকপি কারণ বাঁধাকপি কিডনির কাজের উন্নতি ঘটাতে সক্ষম। কিডনির সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তির জন্য অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য হচ্ছে বাঁধাকপি। ফ্রি র‍্যাডিকেল কোন ক্ষতি করার আগেই ফাইটোক্যামিকেলে সমৃদ্ধ বাঁধাকপি ফ্রি র‍্যাডিকেল ভাঙ্গতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে ফাইবার ও ফলিক এসিডের সাথে ভিটামিন বি ৬, সি এবং কে থাকে। বাঁধাকপি ডায়ালাইসিস ডায়েটের জন্য অনেক ভালো কারণ এতে পটাসিয়ামের পরিমাণ কম থাকে।

২. জাম জাতীয় ফল

ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, ফাইবার ও ফোলেট এর চমৎকার উৎস হচ্ছে জাম জাতীয় ফল যেমন- জাম, স্ট্রবেরি ইত্যাদি কিডনির জন্য অনেক উপকারি। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাশাপাশি অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকায় এই প্রকার ফল প্রদাহ কমাতে ও মুত্রাশয়ের কাজের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।

৩. ডিমের সাদা অংশ

কিডনির সমস্যা আছে এমন মানুষদের ডিমের সাদা অংশ খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কারণ এতে ফসফরাস কম থাকে ও উচ্চমাত্রার প্রোটিন থাকে। উচ্চমাত্রার প্রোটিনে এসেনশিয়াল এমাইনো এসিড থাকে যা কিডনির কাজকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয়। সেই সাথে উচ্চমাত্রার প্রোটিন বিপাকের ফলে কম বর্জ্য উৎপন্ন করে। কিডনির সমস্যা আছে এমন মানুষদের ডিমের কুসুম বাদ দিতে পরামর্শ দেয়া হয় যেন অতিরিক্ত আমিষ কিডনির জন্য বোঝা তৈরি না করে।

৪. গাজর

হাইপারটেনশন কিডনি রোগের নেতৃত্ব দানকারী একটি কারণ। গাজর তেমনই একটি খাদ্য যা হাইপারটেনশন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে গাজর যা কিডনি রোগের আরেকটি কারণ। তবে কাঁচা গাজরে উচ্চমাত্রার পটাসিয়াম থাকে বলে কিডনি রোগীদের নিরাপদ মাত্রায় গ্রহণ করতে হবে।

৫. অলিভ অয়েল

হৃদপিণ্ডের জন্য যেমন উপকারি তেমনি কিডনির জন্যও উপকারি। এই তেল অলেইক এসিড ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ফ্যাটি এসিডের চমৎকার উৎস যা অক্সিডেশন কমিয়ে কিডনিকে ভালো রাখে। এছাড়াও এতে পলিফেনল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে যা প্রদাহ ও জারণ প্রতিরোধ করে। রেগুলার অলিভ অয়েলের চেয়ে ভার্জিন বা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এ উচ্চমাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে।

৬. রসুন

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিক্লটিং উপাদান থাকায় রসুন কিডনি ডিজিজ ও সেই সাথে হার্ট ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। প্রতিদিন সকালে খালিপেটে রসুনের একটি বা দুটি কোয়া খেলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা ও প্রদাহ কমতে সাহায্য করে। এছাড়াও রসুন ভারী ধাতুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কিডনিকে রক্ষা করে।

৭. মাছ

মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড থাকে যা প্রদাহ কমিয়ে কিডনিকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও মাছে উচ্চমাত্রার আমিষ থাকে। ২০০৮ সালে আমেরিকান জার্নাল অফ কিডনি ডিজিজে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায় যে, মাছ খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের ইউরিনের অস্বাভাবিক প্রোটিনের মাত্রা কমে।

যদি আপনি আপনার কিডনিকে সুস্থ রাখতে চান তাহলে আপনার খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলো যুক্ত করুন এবং ফল কেনার সময় তাজা ফল কিনুন।